’৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় সর্ববৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বর্তমান দৌলতপুর থানার শেরপুর মাঠ নামক স্থানে। এ যুদ্ধে নের্তৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-আর্ট এর গ্রæফ কমান্ডার, মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের সহকারী ইউনিট কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান।
২৫ নভেম্বর রাতে আফতাব উদ্দিন প্রায় একশ সুসজ্জিত মুক্তি বাহিনীর একটি দল নিয়ে শেরপুর সংলগ্ন সেন পাড়ায় অবস্থান করে। পাক হানাদার বাহিনীরা সংবাদটি তাদের দোসরদের মাধ্যমে পেয়ে যায় এবং অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে ওই এলাকার কাছে দেড় শ’ জনের সুসজ্জিত একটা দল নিয়ে ২৫ নভেম্বর মধ্য রাতে শেরপুরের নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরে আগুন ধরিয়ে বেপরোয়া ভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তি বাহিনী পাক হানাদারদের উপস্থিতি ও অবস্থান জানতে পেরে বর্তমান মিরপুর থানার চিথলিয়া এবং দৌলতপুর থানার শেরপুরের মধ্যবর্তী স্থানে সাগরখালী নদীর তীরে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে এবং রাত অনুমান তিনটার দিকে মুক্তি বাহিনী পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয়পক্ষ পরস্পরের মুখোমুখী হয়। ৬ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ৬০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়। অন্যদিকে শেরপুর গ্রামের হাজী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একই গ্রামে হীরা ও আজিজুল নামে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুত্বর আহত হন।
এছাড়াও ওই যুদ্ধের কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান, মইন উদ্দিন, আবদুল জব্বার, হায়দার আলী সহ ২০জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এই গেরিলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কারণে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকা মুক্তি বাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয় এবং পাহাড়পুর গ্রামে একটি শক্তিশালী মুক্তি বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা সম্ভব হয়।
যার ফলে ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে ১শ’ ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা আমলাকে মুক্ত করে মিরপুর থানায় (পুলিশ ফাড়ি) জাতীয় সঙ্গীত ও গান স্যালুটের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সুচিত হয়।