
কুষ্টিয়া জেলার পশ্চিম দিকে প্রাগপুর ইউনিয়ন অন্তর্গত মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বিলগাতুয়া গ্রাম। করোনা সংক্রামণ ও ঝুঁকি প্রতিরোধে ব্যস্ত পুলিশ,বিজিবি,র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে সাধারণ মানুষেরও বেড়েছে ব্যস্ততা। এই সুযোগে বিলগাতুয়া গ্রামের মাদকচোরাচালান সিন্ডিকেটের এক গডফাদারের নির্দেশে মাদকের বিপুল মজুত গড়ে তুলতে মরিয়া হয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। আগামী ১০/১২ দিনে কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের অপচেষ্টা চলছে।
বিলগাতুয়া গ্রামে বসবাসরত নবীন-প্রবীন সবাই মাদকব্যবসায়ীদের নাম জানেন,মুখ খুলেন না কেউ। ছাত্র,শিক্ষক,মসজিদের ঈমাম,দোকানী নানা শ্রেণির পেশার মানুষের সাথে গোপনে প্রতিবেদকের সাথে কথা হলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে সাহস পাননি কেউ। সন্ধ্যা নামলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরিচিত মটরসাইকেল আরোহীর আগমন ঘটে বিলগাতুয়া গ্রামে। এই গ্রাম থেকে মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।মাথাভাঙ্গা নদী অপ্রশ্বস্ত।
স্থানীয়রা জানান,সহজে,স্বল্প সময় ও অর্থ ব্যয় করে ঝুঁকিমুক্ত মাদকচোরাচালানের সুবিধাজনক রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট। একসময় ভারতের জলঙ্গী সংলগ্ন প্রমত্তা পদ্মার তীরে গড়ে ওঠা ঠোটার পাড়া, মোহাম্মদপুর,বাংলা বাজার,উদয়নগর এলাকায় মাদক চোরাচালান বেশী হতো। বতর্মানে পদ্মানদীর প্রশ্বস্ততা বেশী হওয়ায় মাদক চোরাচালানে সময় বেশী লাগে। বিলগাতুয়া গ্রামের তিন পাশে সংকীর্ণ মাথা ভাঙ্গা নদী। অর্থ্যাৎ তিনদিকেই ভারত। এক পাশে প্রাগপুর বাজার। বিজিবি’র চোখে ধুলো দিতে সফল হয় এই সিন্ডিকেট। ভিনদেশী মাদক চোরাচালান চক্রের সাথে রয়েছে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। এক বিজিবি সোর্সের অপকৌশল গ্রামের মাঝখানে বিলগাতুয়া বিজিবি ক্যাম্প। কথিত সোর্স পরিচয়দানকারীর ভয়ে মুখ খুলেনা কেউ। মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের মাষ্টারমাইন্ড সে। গ্রামের সবার মুখে মুখে তার নাম। বিজিবি টহল টিমকে ভুল তথ্য দিয়ে ভুল পথে নিয়ে যায়। অপরদিকে বিপুল পরিমাণ মাদক চালান পৌঁছে যায় নিরাপদে। দৌলতপুর থানা থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে বিলগাতুয়া সিমান্ত। পুলিশ যাওয়ার পূর্বেই তারা টের পায়।
বিজিবি বলছে বিলগাতুয়া গ্রামে তাদের কোন সোর্স নাই। সেই কথিত সোর্স প্রকাশ্য দিবালোকে বিজিবির সোর্স পরিচয়ে মোটরসাইকেলযোগে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। একসঙ্গে বসে স্পিড খায়। এই দৃশ্য গ্রামবাসি দেখেছেন।কালোটাকার পাহাড়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ২০১৯ সালের ৬ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সপ্তাহ না পেরিয়েই ব্যাপক-উদ্দীপনা নিয়ে মাদক ব্যবসা শুরু করে। অগ্রনী ব্যাংকের প্রাগপুর শাখায় তার স্ত্রীর নামে ২০ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। নেই প্রকাশ্য কোন পেশা তাদের। সুরম্য অট্রালিকা,বিলাসী জীবনযাত্রা কিসের আলামত? কালো টাকা দিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের কিনে ফেলেছে।
আতংকে সিমান্তবাসীঃ গত ৫ জুলাই রাতে দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়ীতে বোমা হামলা করে একদল সন্ত্রাসী। সপ্তাহ শেষ হলেও কোন আসামী গ্রেফতার হয় নি। সিমান্ত এলাকায় বসবাসরত এই ধরনের সন্ত্রাসীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রের বিপুল মজুত রয়েছে এবং সিমান্তবর্তী “গোল্ডেন ভিলেজ” গুলোতে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটতে পারে বলে ধারনা স্থানীয়দের। মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারা,আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে ফামিদ,কাবুল,হামিদুল ডাকাত হত্যাকান্ড ঘটেছে। ইহার শেষ কোথায়?
মাদকবহনকারী ধৃত হয় কিন্তু বহাল তবিয়তে গডফাদারঃ পুলিশ,বিজিবি,র্যাব,মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধৃত হয় মাদক বহনকারী শ্রমিক। একাধিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাদের ঠিকানা বিলগাতুয়া,পাকুড়িয়া,জামালপুর,ঠোটারপাড়া,সোনাইকুন্ডিসহ সীমান্তবর্তী ২৬টি গোল্ডেন ভিলেজ। দরিদ্রতা জনিত কারণে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে তারা মাদক চোরাচালানের মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। পর্দার অন্তরালে রয়ে যায় মাষ্টার মাইন্ড,গডফাদার,বিনিয়োগ কারী।
গত ১২ডিসেম্বর’২০২১ বিকাল ৩টায় ৩৯৮বোতল ফেনসিডিল সহ ধৃত হন ভ্যানচালক মিঠন রুনু। সে বিলগাতুয়া গ্রামের হালিম মন্ডলের ছেলে। দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে মাদক পরিবহন করে থাকে। কিন্তু সেই গডফাদার আজও গ্রেফতার হয়নি।
গত ২১ সেপ্টেম্বর,২০২০ দৌলতপুর উপজেলার সোনাইকুন্ডি মাদ্রাসা পাড়া নামক স্থানে ৪ কেজি গাঁজাসহ ধৃত হন বিলগাতুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও দরিদ্র কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রাকিব। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে যারা মাদক তুলে দিচ্ছেন তাদের বিচার হবে কি?
এভাবেই একটি গ্রামে শুরু হয়েছে ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয়। মাদক চোরাচালানের এই রুট বন্ধ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকাবাসী।