কুষ্টিয়ায় দেড়’শ বছর পূর্বে শহরের প্রানকেন্দ্রে ৩একর জমির উপর স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া হাইস্কুলের ভু-সম্পরত্তিসহ অবকাঠামো আত্মসাৎ এবং অজ্ঞাত কোটি টাকার সম্পদ আহরণের দায়ে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান(৫৭) ও বিলকিস রহমান(৪৭)র বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক কুষ্টিয়া। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক(দায়িত্বপ্রাপ্ত) তহিদুল ইসলামের আদালতে মামলা দুটি আমলে নেয়া হয়। এর আগে দুদক কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এজাহারটি আদালতে দাখিল করেন দুদকের কৌশুলী এ্যাড. আল-মুজাহিদ মিঠু।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮অক্টোবর হতে ২০২০ সালের ১৮আগষ্ট সময়কাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের গৃহবধু স্ত্রী শহরের ১৭/৩,জাহের আলী সড়ক, পেয়ারাতলার বাসিন্দা বিলকিস রহমান(৪৭) জ্ঞাত আয় বহির্ভুত ৫৫লক্ষ ৩৩হাজার,৫শ ৬৪টাকা আহরণ করেছেন; দুদক তদন্তকালে প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি যা দুদক আইন ২০০৪ এর দ:বি: ২৬(২) এবং ২৭(১) তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন। একই ভাবে প্রধান শিক্ষক সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত: ময়েন উদ্দিন আহমেদের ছেলে মো: খলিলুর রহমান ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারী হতে ২০২০ সালের ১৮ আগষ্ট সময়কালের মধ্যে ৫২লক্ষ, ৫৫হাজার, ১শ ৬৯ টাকা আয়ের বৈধ কোন উৎস দেখাতে ব্যর্থতাসহ তদন্তকালে সদুত্তোর দিতে না পারায় তিনি স্ত্রী বিলকিস রহমানের মতই অভিন্ন ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক আরও একটি মামলা করেছে দুদক।
এদিকে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতকোটি টাকার সম্পদ প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রভাবশলী মহলের ইন্দনে লুটপাট ও আত্মসাতের ঘটনায় এতোদিন মুখ খুলতে পারেনি শহরবাসী। দুদকের এই মামলা দায়ের্রে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শহরবাসী আনন্দে মিষ্টিমুখ করার ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডা: এর পরিচালক এসএম কাদরী শাকিল বলেন, অনেক দেরিতে হলেও দুদকের এই পদক্ষেপে আমি খুশি, তবে দুদক যে কেবল কোটি টাকার সম্পত্তির হিসেব দিচ্ছেন, সেই পরিমানটাও আরও নিবিড় ভাবে প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠা দরকার। আমার মনে হয় এই পরিমানটা আরও অধিক হওয়ার কথা। যাই হোক সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক বিচারসহ বিদ্যালয়টিকে রক্ষার দাবি করছি।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিকিৎসক নেতা ডা: আমিনুল হক রতন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এতোদিন ধরে আমাদের চোখের সামনে তিল তিল করে বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছিল; আমরা অনেকেই দেখেছি; কিন্তু কার্যত: কেউই মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন কিছু স্বার্থন্বেষী প্রভাবশালী মহলের অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। দুদক এতোদিন পর মামলাটি করলেও আমি বলতে চাই, এই প্রতিষ্ঠানটিকে লুটপাট করে এর অস্তিত্বকে যারা বিপন্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাদের সকলেও মুখোস উন্মোচিত করার দাবিসহ ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি তার যথার্থ প্রান ফিরে পায় সেই দাবি করছি। আমরা শহরবাসী জানতে চাই প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠানটির কি পরিমান সম্পদ লুটপাট হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান।
দুদকের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চেয়ে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: একে এম মুনির বলেন, দুদকের মামলার বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়ে সাথে সম্পৃক্ত। স্কুলের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই; তাছাড়া দুদক যে মামলা করেছে তার মেরিট দুর্বল। এ মামলায় শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না।