কুষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে একটি সংগবদ্ধ চোরচক্রের বেপরোয়া চুরিদারিই এই রেল দুর্ঘটনা বলে অভিযোগ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের। ঘটনার সম্ভাব্য সত্যতা থাকতে পারে বলে মনে করছেন কর্তব্যরত ষ্টেশন মাস্টার জালাল উদ্দিন বিশ্বাস। দুর্ঘটনার সম্ভাব্য প্রাথমিক ধারণা উদ্ধার কাজের সময় জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন উদ্ধার কাজে কর্তব্যরত বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশল (ডিএমই) আশিশ কুমার মন্ডল।
শুক্রবার দুপুর দেড়টায় কুষ্টিয়া মিলপাড়া এলাকায় গমভর্তি মালবাহী ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা উদ্ধার কাজ ও ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত শেষে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি-ফরিদপুর-টুঙ্গিপাড়া, রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া-খুলনা-রাজশাহী এবং ফরিদপুর-রাজশাহী রেলপথে স্বাভাবিক যোগাযোগ পূনস্থাপিত হয়। এতে উল্লেখিত রেলপথে দীর্ঘ সাড়ে ২৮ ঘন্টার চরম যাত্রী ভোগান্তির অবসান হলো বলে নিশ্চিত করেন পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের ষ্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম। ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে শোনা গেলেও ওই কমিটির কাউকে তদন্তের কাজ শুরু করতে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এক ট্রাক চালক সুজনের অভিযোগ, শুক্রবার দুপুরের যেভাবে এই দুর্ঘনাটি ঘটে তাতে আমাদের চোখেই মনে হয়েছে এইটা অবৈধ কাজ। রেলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চুরির মালামাল তাড়াহুরা করে অন্যত্র সরানোর সময় এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। কাটপিচ রেল বহনকারী ট্রলির চালকরা বৈধভাবে যদি একাজ কতর তাহলে ষ্টেশন মাস্টারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা লাইনের উপর ট্রলি তুলত না। ওরা কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে লাইনের কাজ করার নামে প্রায়ই প্রকাশ্যে রেলের বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরির কাজ করে আসছে।
এসময় প্রত্যক্ষদর্শীদের দেখিয়ে দেয়া উদ্ধার কাজে লিপ্ত সাহাবুদ্দিন নামে এক রেল শ্রমিককে স্থানীয়দের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে দ্রæত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
শুক্রবার দুপুরে ঘটে যাওয়া মালবাহী ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়ে সমগ্র দুর্ঘটনর যে বিশদ বিবরণ তুলে ধরে কর্তব্যরত কুষ্টিয়া রেল ষ্টেশন মাস্টার জালাল উদ্দিন বিশ^াস বলেন, শুক্রবার দুপুরে গমভর্তি মালবাহী ট্রেনটি পোড়াদহ ষ্টেশন মাস্টার দুপুর ১টা ৫মিনিটে ছেড়ে দেন, এরপর জগতি ক্রস করলে আমি কুমারখালীকে ১টা ১৯মিনিটে লাইন ক্লিয়ার জানায় এবং আমার ষ্ট্রেশন ক্রস করে চলে যাওয়ার জন্য যথা নিয়মে সিগন্যাল দিই ঠিক এই সময়ে হঠাৎ ট্রেনটি থেকে যায়। বিষয়টি জানার জন্য আমি সামনে দিকে এগুতে থাকি কিছুদুর গিয়ে দেখি কাটপিচ রেল বহনকারী ট্রলি ছিটকে লাইনের পাশে পড়ে আছে এবং ওই ট্রলির রেলের টুকরাগুলি লাইনচ্যুৎ বগির নীচে আটকে গিয়ে সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে এবং ৫টি বগি পড়ে গিয়েছে। এসময় দুর্ঘটনায় জড়িত ওই ট্রলির চালকদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই। কারা ছিলো তাও জানতে পারিনি। শুনেছি আইএমইর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন এসব রেল বহনের কাজ করছিলো। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি সিসি কপি আমার এখানে দেয়া হয়েছিলো। তবে ঠিক কি পরিমান মালামামল বহন করতে হবে সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিমানের উল্লেখ ছিলো না। তারা এরা কেউই রেলের লোক নয়; ঠিকাদেরর লোক সেকারণেই আমার নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও তারা লাইনে ট্রলি তুলেছে বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটলো। এই ঘটনাটি যদি যাত্রাবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে ঘটত তাহলে ব্যাপক সংখ্যক প্রাণহানীর ঘটনার সম্ভাবনা ছিলো বলেও জানালেন এই ষ্টেশন মাষ্টার জালাল উদ্দিন।
রেল সরঞ্জাম চুরিচক্রের বে-পরোয়া খামখেয়ালীর কারনেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে সেখানে আইন শৃংখলা রক্ষাসহ মালামালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন রেল পুলিশ। এখানে কারো কোন অসৎ, বা চুরি-তছরূপ বা আত্মসাতের কোন ঘটনায় এই দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা তদন্তকারী দল তদন্ত করে দেখার পর প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা ফৌজদারি কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে সেক্ষেত্রে আমাদের জানালে আমরা আইন গ্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তবে বিষয় সংশ্লিষ্ট মন্তব্য জানতে সেখানে উপস্থিত বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার(ডিএমই) প্রকৌশলী আশিশ কুমার মন্ডলের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চরম ক্ষুব্ধ হন এবং অসৌজন্য মূলক আচরণসহ বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : এনামুল হক রাসেল, সম্পাদকীয় কার্যালয়: খলিসাকুন্ডি হাট, চার রাস্তার মোড়, কুষ্টিয়া ।
বার্তা বিভাগ: মোবাইল -০১৭২৯-৬০০১৩০ , ইমেইল: raselahamed29@gmail.com
ই-পেপার কপি