আমার খোকন ভাই। রেখে আসলাম গোরস্থানে। আমি তখন দিনের খবর পত্রিকার সম্পাদক ছিলাম। খোকন ভাইয়ের দৈনিক স্বর্ণযুগের ডিক্লারেশন হল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ওই মনে হয় একটি পত্রিকা যার ডিক্লেয়ারেশন হয়েছে। আমি আর খোকন ভাই পত্রিকা বের করতাম। তখন এত আধুনিক ছিল না।
রাত জেগে পাশাপাশি বসে দুইজন পত্রিকার পেজ মেকিং করাতাম। ছোট্ট একটি ছেলে যে পরবর্তী সময়ে একটি পত্রিকার সম্পাদক হয়েছে সে আমাদের কাজটি করে দিত । অধিকাংশ দিন কাজ শেষ হতে ভোর হয়ে যেত। খোকন ভাই এর সাথে আমার বয়সের পার্থক্য অনেক। তারপরও তিনি আমার সাথে বন্ধুর মত মিশতেন।
তার কৈশোরের গল্প, যৌবনের গল্প, রাশিয়ায় তার জীবন যাপন কেমন ছিল এসব নিয়ে দীর্ঘক্ষন গল্প করতেন। তিনি আমাকে বহুদিন বলেছেন রাত জেগে পত্রিকা বের করা বন্ধ করো না হলে কিন্তু মরে যাবে। হঠাৎ কথায় কথায় রেগে যাওয়া আবার একই সময় হেসে ফেলা মানুষটি আমাদের খোকন ভাই। সাধারণত মানুষ ঝামেলা এড়িয়ে চলে। খোকন ভাই কোন মানুষ বিপদে পড়লে নিজের ঝামেলা হতে পারে জেনেও তার জন্য সবকিছু করতেন। বিপদে-আপদে 2006 সাল থেকে 2021 মৃত্যু অবধি তিনি আমার উপকারী মানুষ ছিলেন। উপকারী মানুষ কেন ?
খোকন ভাই তো আমার আত্মার আত্মীয় প্রাণের দোসর ছিলেন। যেকোন বিষয়ে আমি রেগে গেলে খোকন ভাই আমাকে ছোট মানুষের মত মাথায় হাত দিয়ে বোঝাতেন। আজ মাথা থেকে হাত সরে গেল।
চিকিৎসার কোনো কমতি ছিল না। স্ট্রোকের সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া। কুষ্টিয়া হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তারদের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হওয়া, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের নিয়ম ভেঙে মধ্যরাতে সিটি স্ক্যান করে দেওয়া, সবই করা হয়েছে। স্ট্রোকের সাত ঘণ্টার মাথায় দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে খোকন ভাইকে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসার কোনো কমতি হয়নি। কিন্তু ফিরে এলো খোকন ভাই ঠিকই তবে লাশ হয়ে । আর কখনো বকবে না আমাকে। ঈদের দিন তারপরও বুকে শুধুই কষ্ট। আল্লাহ তুমি আমার খোকন ভাইকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো।
লেখক : সাধারন সম্পাদক, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি।