
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় গ্রামের নূর মহম্মদ মালিথার ছেলে মারফত আলি, পেশায় তিনি একজন সৎ পুলিশ অফিসার। অনেক কষ্ট করে বাড়ী করার জন্য জমি ক্রয় করেন পার্শবর্তী ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের মহিষাডরা গ্রামে।
২০০৮ সালে ১৭ এপ্রিল ১৬৪৪ নং দলিল মূলে .০৬৬০ একর জমি ক্রয় করেন, যার মৌজা- পাটুয়া কান্দি, হোল্ডিং নং ১০৫৮, আর.এস.খারিজ খতিয়ান-১৭২/৩/১, খারিজ কেচ নং ৪১৯১/ ওঢ-ওও/০৬-০৭, দাগনং ৩৮৯৫ ও ৩৮৯৭। ৩৮৯৫ দাগে .০৩৮১ একর ও ৩৮৯৭ দাগে .০২৭৯ একর, বিক্রেতা ফিরোজা বেগম। নিখুঁত ভাবে কাগজ পত্র থাকা সত্বেও জমি দখল ও নানা জটিলতা নিয়ে বাড়ীর কাজ থেকে বঞ্চিত মারফত আলি। তিনি শত মানুষের সমস্যা দুর করলেও নিজে জমি ক্রয় করে পেশি শক্তির কাছে হার মেনে রয়েছেন চরম বিপাকে।
জানাগেছে ৩৮৯৫ নং দাগের রেকর্ডীয় জমির মালিক আয়েনুদ্দীন বিশ^াস, তার মৃত্যুর পর .০৯০০ একর জমির মালিক হন তার ৪ কন্যা। মোছাঃ ফিরোজা বেগম, মোছাঃ জাহানারা খাতুন, মোছাঃ রিজিয়া হক এবং হাজেরা খাতুন। এরা উক্ত .০৯০০ একর জমি প্রাপ্ত হয়ে নিজ নিজ নামে নাম পত্তন করেন। যাহার খারিজ কেস নং ৫৩৫/ওঢ-ওও/০২-০৩, হোল্ডিং: ২০৬৬, উক্ত .০৯০০ একর জমির উপর তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসের সুবিধার্থে গত ইংরেজী ২৮/০৫/২০০৩ তারিখে ২০০১ নং বন্টননামা দলিল করা হয়, .০৬৩১ একর জমির মালিক হন মোছাঃ ফিরোজা বেগম এবং .০১৯৪ একর জমির মালিক হন মোছাঃ হাজেরা খাতুন অবশিষ্ট .০০৭৫ একর জমি ৪ বোনের নামে চলাচলের রাস্তা হিসেবে রয়ে যায়।
ফিরোজা বেগম বন্টন নামা দলিলের প্রাপ্ত .০৬৩১ একর জমি নিজ নামে নাম পত্তন করেন। যাহার খারিজ কেস নং ৪১৯১/ ওঢ-ওও/০৬-০৭, হোল্ডিং: ১০৫৯, অত্র খারিজ হতে ফিরোজা বেগম এর নিকট হতে গত ইংরেজী ০৯/০৪/২০০৯ ইং তারিখে ১০৭৩ নং কবলা দলিলে .০২৫০ একর জমি ক্রয় করেন মোঃ শহিদুল ইসলাম এবং গত ইংরেজী ১৭/০৪/২০০৮ ইং তারিখে ১৬৪৪ নং কবলা দলিলে .০৩৮১ একর জমি ক্রয় করেন মোঃ মারফত আলী।
ফিরোজা বেগম এর বন্টন নামা দলিলের প্রাপ্ত জমি খারিজ হয়ে বিক্রয় হয়ে গেলে পরবর্তীতে ৫৩৫/ ওঢ-ওও/০২-০৩, হোল্ডিং: ২০৬৬ নং খারিজ হতে হাজেরা খাতুন ইজামুদ্দিন এর নিকট .০১৯৪ একর জমি বিক্রয় করেন। অবশিষ্ট ৪ বোনের .০০৭৫ একর জমির মধ্যে ফিরোজা বেগম গত ইংরেজী ২৯/০৫/০৮ তারিখে ২৪৪৬ ও ২৪৪৭ নং কবলা দলিলে .০০১৯ একর জমি বিক্রয় করেন মোকাদ্দেস হোসেন ও সিরাজ আলীর নিকট। মোট: .০৯০০ একর জমির মধ্যে শহিদুল ইসলাম এর নিকট .০২৫০ একর + মারফত আলীর নিকট .০৩৮১ একর + মোকাদ্দেস হোসেনের নিকট .০০০৯ একর + সিরাজ আলীর নিকট .০০১০ একর + এবং ইজামুদ্দিন এর নিকট .০১৯৪ একর মোট .০৮৪৪ একর জমি বিক্রয় হয়ে যায়। অবশিষ্ট .০০৫৬ একর জমি ৩৮৯৫ নং দাগে রহিয়া যায়।
১৭/০৪/২০০৮ইং তারিখের ১৬৪৪নং দলিল মূলে মারফত আলী ফিরোজা বেগমের নিকট থেকে .০৩৮১ একর জমি ০৯/০৪/২০০৮ ইং তারিখের ১০৭৩নং কবলা দলিল মূলে বর্তমান বাদী .০২৫০ একর জমি খরিদ করেন। ফলে ফিরোজা বেগমের অত্র বন্টনকৃত জমিতে কোন স্বত্ত্ব বা স্বার্থ থাকে না। এরপরেও রাস্তার জমি থেকে ফিরোজা বেগম ২৯/০৫/২০০৮ইং তারিখের ২৪৪৬ ও ২৪৪৭নং দলিল মূলে মোকাদ্দেস ও সিরাজের নিকট .০০১৯ একর জমি হস্তান্তর করেন। গত ২৪/০৫/২০১৫ইং তারিখের ৬০৫নং কবলা মূলে হাজেরা খাতুন তাহার অনুকুলে বন্টনকৃত .০১৯৪ একর জমি ইজামদ্দিনের নিকট হস্তান্তর পূর্বক নি:স্বত্ত্ববান হন। ফলে দেখা যায় যে, অত্র ৩৮৯৫নং দাগের .০৯০০ একর জমি সম্পূর্ণ হস্তান্তর হয়।
অন্যদিকে মালিক হাজেরা ও ফিরোজা বেগমের মৃত্যুরপর তাহাদের ওয়ারিশের নিকট থেকে আতিয়ার রহমান .০১২৫ একর জমি ২২/০৫/২০১৭ইং তারিখের ২১৬৪নং দলিলে খরিদ করে ও তহসিলদারকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে খারিজ করে। সেখানে ফিরোজা ও হাজেরা নিজেরাই জমির হস্তান্তর সম্পূর্ণ করে গেছেন। সেখানে তাহার ওয়ারিশদের উক্ত জমি পুনরায় হস্তান্তরের কোন যৌক্তিতা নাই। তারপরও আতিয়ার দাগের .০০৫০ একর জমি ২৯/১১/২০১৮ইং তারিখের ৪১৯৮নং কবলা দলিল মূলে ইউনিয়ন পরিষদকে হস্তান্তর করে, জমি অবশিষ্ট থাকে .০০০৬ একর অথচ প্রায় .০০২০ একর জমি জোর পূর্বক দখল করে।
সরেজমিন তদন্তে ও সার্ভেয়ার নক্সা পর্যালোচনায় দেখা গেল যে, ৩৮৯৫নং দাগের পশ্চিমাংশে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার জন্য জায়গা রাখা হয়। সেখানে ২ শতাংশ জমি আতিয়ার জোর পূর্বক একখানা দোকান ঘর নির্মাণা করে ভোগ দখলে আছে। এখানে আতিয়ারের আইন গত কোন স্বস্ত ও স্বার্থ নাই। ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার প্রয়োজনে ও বিবাদ মেটাতে দোকান ঘরটি ভেঙ্গে প্রকৃত মালিকের কাছে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন।
পুলিশ অফিসার মারফত আলি জানান ১২ বছর আগে জমি ক্রয় করে চরম মানুষিক ও আর্থিক সংকটে রয়েছেন, বাড়ী করতে না পেরে পৈত্রিক ভিটায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন জাপন করছেন। চাকুরীর কারণে মামলা পরিচালনা ও জমি দখল বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ভেড়ামারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মামলা করা আছে, অফিসার না থাকায় দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে পড়েছেন।
এলাকার ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, একজন ভূমি দস্যু, আতিয়ারের ৬ পয়েন্ট জায়গা আছে, সে ২ শতক জমি জোর পূর্বক দখল করে দোকান ঘর নির্মান করেছে। আমরা বিষয় মিমাংসার জন্য বহু চেষ্টা করেছি পারিনি। এ জন্য ধরমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুই তহসিলদার আনিচুর রহমান ও বিলায়েত দায়ী, তারা মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে খারিজকৃত জমি পূন:রায় আতিয়ারের নামে খারিজ করে দিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করেছে, এ জমি কে কেন্দ্র করে আইয়ুব আলি নামে এক জন ষ্টোক করে মারা গেছে।
জানাগেছে আনিচুর রহমান বর্তমানে ধরমপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মাকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং টাকার বিনিময়ে নানা রকম অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আতিয়ারের কাছে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, তিনি ফোন রিসিট করেনি। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল।