
কয়েকদিনে নদীগর্ভে বিলীন কয়েকশ একর ফসলি জমি: হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের কয়েকশ’ একর আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাধ, ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের খুটিসহ অসংখ্য স্থাপনা। এভাবে নদী অব্যাহত থাকলে বিলীন হয়ে যাবে মরিচা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।
স্থানীয়রা জানায়, এ বছর বন্যার পানি গত বছরের মত বৃদ্ধি না পেলেও পানি নামার সাথে সাথে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা-হাটখোলা থেকে কোলদিয়াড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৪ ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, বাগানসহ অনেক স্থাপনা। ৪ ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক দিনে কয়েকশ একর ফসলি জমি নদীর পেটে চলে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনের ফলে নদী থেকে মাত্র ৫’শ ফুট দুরে রয়েছে ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় সঞ্চালন লাইনের খাম্বা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ, নদী ভরাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভুরকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় কান্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জুনিয়াদহ বাজার। এছাড়াও ভুরকা, কোলদিয়াড়, জুনিয়াদহ, কোলদিয়াড় পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে ঘরবাড়ি হারানোর আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু হোসেন জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার এর তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নদীতে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ধান-আখ ক্ষেত, বাগানসহ বিস্তির্ণ এলাকা। এ ভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে ৩টি ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, পদ্মার ভাঙনে তার ইউনিয়নের অনেকে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া না হলে বসতবাড়ি সহ বহু প্রতিস্থান ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ করেন তিনি।
এ দিকে নদী ভাঙনের তীব্রতা নিরুপন ও নদী ভাঙন রোধকল্পে পরিকল্পনা করতে নদীর ভাঙ্গন কবলিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শ করে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। ভাঙন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। পরিদর্শনকালে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক নদীভাঙন রুখতে নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে সিমেন্টের বøক নির্মান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।